1. hedaiet88@gmail.com : nursebd :
সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:২৮ পূর্বাহ্ন

নার্স, নার্সিং নিয়ে বিশেষ সাক্ষাৎকার এবং আলোচনা

  • প্রকাশিত : সোমবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৪
  • ১১৫ বার পড়া হয়েছে

একটি বিদেশী পত্রিকা, তাদের একটি বিশেষ প্রবন্ধে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নার্সদের বিভিন্ন বিষয়ে সাক্ষাৎকার নেয়। তারই কিছু অংশ বিশেষ আপনাদের জন্য অনুবাদ করা হল…..

একজন দক্ষ নার্স হওয়ার জন্য যদিও নিঃস্বার্থ হওয়া দরকার কিন্তু শুধু তাই-ই যথেষ্ট নয়। ভাল নার্স হওয়ার জন্য অনেক প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতা দরকার। নার্সিংয়ের ওপর তিন থেকে চার বছর বা তারও বেশি সময় পড়াশোনা করতে এবং হাতে কলমে শিক্ষা নিতে হবে। কিন্তু প্রশ্ন হল যে, কোন গুণগুলো থাকলে একজন ভাল নার্স হওয়া যায়?? 

কিছু অভিজ্ঞ নার্সদের এই প্রশ্নটা করেছে, এখানে তাদের কয়েকজনের কথা দেওয়া হল।

“ডাক্তার রোগ সারান কিন্তু নার্স রোগীর দেখাশোনা করেন। একজন নার্সকে মানসিক ও শারীরিকভাবে ভেঙে পড়া সেই সমস্ত রোগীদের সুস্থ করে তুলতে হয়, যারা জানতে পারে যে তাদের এক দুরারোগ্য ব্যাধি হয়েছে বা খুব শীঘ্রই মারা যাবে। এছাড়াও আপনাকে একজন রোগীর মায়ের ভূমিকা নিতে হবে।”—কারমেন কিলমার্টিন, স্পেন।

,

“একজন রোগীর ব্যথা ও যন্ত্রণাকে অনুভব করতে হবে ও তাকে সাহায্য করার ইচ্ছা থাকতে হবে। এই জন্য দয়া ও ধৈর্য থাকা দরকার। নার্সিং ও চিকিৎসাবিদ্যা সম্বন্ধে সবসময় আরও বেশি জানতে হবে।”—তাদাশি হাতানো, জাপান।

“সম্প্রতি নার্সদের আরও বেশি করে পেশাদারিত্ব মূলক শিক্ষা গ্রহণের দরকার হয়েছে। তাই, তাদের পড়াশোনা করার ইচ্ছা ও তা বোঝার ক্ষমতা থাকা দরকার। শুধু তাই নয়, প্রয়োজনে নার্সদের ত্বরিত সিদ্ধান্ত ও সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়ার গুন থাকতে হবে।”—কেইকো কাওয়ানে, জাপান।

“একজন নার্স হিসেবে আপনাকে আন্তরিক মনোভাব দেখাতে হবে। আপনার সহ্য শক্তি থাকতে হবে এবং সহানুভূতি দেখাতে হবে।”—আরাসেলি গারসিয়া পাডিয়া, মেক্সিকো।

“একজন ভাল নার্সের মনোযোগ দিয়ে অনুধাবনের অভ্যাস থাকতে হবে, সবকিছু খুব ভালভাবে খেয়াল করতে এবং পেশাদারি হতে হবে। একজন নার্সের মধ্যে যদি আত্মত্যাগের মনোভাব না থাকে অর্থাৎ তার মধ্যে যদি সামান্য স্বার্থপরতা থাকে বা তার থেকে উঁচু মর্যাদার মেডিকেল কর্তৃপক্ষের কেউ পরামর্শ দিলে যদি সে বিরক্ত হয়, তাহলে ওই নার্স রোগী এবং তার সহকর্মীদের জন্য অনুপযোগী বলে বিবেচিত হবে।”—রোসাঞ্জেলা সান্তোষ, ব্রাজিল।

“কয়েকটা গুণ থাকতেই হবে যেমন, নমনীয় মনোভাব, সহ্য শক্তি এবং ধৈর্য। শুধু তাই নয়, আপনাকে খোলা মনের হতে হবে আর সেইসঙ্গে সহকর্মীদের ও মেডিকেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মানিয়ে চলার ক্ষমতা থাকতে হবে। দক্ষভাবে কাজ করে চলার জন্য আপনাকে নতুন নতুন কৌশলগুলো তাড়াতাড়ি শিখে নিতে হবে।”—মার্ক কোলার, ফ্রান্স।

“লোকেদেরকে ভালবাসতে হবে এবং অন্যদের সাহায্য করার ইচ্ছা আপনার থাকতে হবে। কঠিন মানসিক চাপ মোকাবিলা করার শক্তি থাকতে হবে কারণ এই কাজে কোনভাবেই ভুল করা চলবে না। আপনার মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতাও থাকতে হবে যাতে প্রয়োজনে অল্প কয়েকজন সহকর্মী নিয়েও উন্নত মানের সেবা প্রদান করতে পারেন।”—ক্লডিয়া রেকারবাকার, নেদারল্যান্ড

নার্সিংয়ে কীরকম আনন্দ পাওয়া যায়?

এই প্রশ্নের উত্তর একজন ব্যক্তি নার্সিং এর কোন শাখায় কাজ করেন তার ওপর নির্ভর করে। যেমন মিডওয়াইফরা যখন কোন শিশুকে সুস্থভাবে জন্ম নিতে দেখেন তখন তারা খুবই আনন্দিত হন। নেদারল্যান্ডের একজন মিডওয়াইফ বলেন, “একটা সুস্থসবল শিশুকে জন্ম নিতে সাহায্য করা ও দেখা সত্যিই আনন্দের।” ইয়োলান্ডা কিলেন-ফান হুফ্ট নামে নেদারল্যান্ডেরই আর একজন মিডওয়াইফ বলেন: “শিশুর জন্ম হল বড় বড় আনন্দগুলোর মধ্যে একটা, যা এক দম্পতি ও একজন স্বাস্থ্য কর্মী উপভোগ করতে পারেন। এটা এক বিস্ময়কর ব্যাপার!”

ফ্রান্সের দ্রুয়ের রাশিট আ্যসাম একজন সরকারি অনুমোদনপ্রাপ্ত নার্স আ্যনেসথেটিস্ট। তার বয়স ৪২ কি ৪৩ বছর। কেন তার নার্সিং করতে ভাল লাগে? তিনি বলেন, এর কারণ হল ‘একটা সফল অপারেশনে অবদান রাখতে পারার এবং আগ্রহজনক ও দিন দিন উন্নত হচ্ছে এমন এক পেশার কর্মী হতে পারার সন্তুষ্টি।’ ফ্রান্সের আইজ্যাক বেংগিলি বলেছিলেন, “একজন মূমুর্ষু রোগী যার বাঁচার কোন আশা নেই বলে মনে করা হয়, তাকে যখন আমরা সুস্থ করে তুলি তখন রোগী ও তার পরিবারের লোকেরা যখন আমাদের ধন্যবাদ জানায় সেটাই আমার মনকে আনন্দে ভরিয়ে দেয়।”

টেরি ওয়েদারসান, যার কথা আগে বলা হয়েছে তাকে একবার এভাবে ধন্যবাদ জানানো হয়েছিল। একজন বিধবা তাকে লিখেছিলেন: “শার্লির অসুখের সময় আপনি যেভাবে শান্ত মনোভাব ও আত্মবিশ্বাস নিয়ে সেবা করেছিলেন তা আমাদের মন থেকে সমস্ত দুশ্চিন্তা দূর করে দিয়েছিল, যা আরেকবার না বলে আমি থাকতে পারছি না। আপনার আন্তরিকতা আমাদের দুঃখ দূর করে দিয়েছিল ও তা আমাদের জন্য এক আশ্রয় হয়েছিল, যেখান থেকে আমরা শক্তি পেয়েছিলাম।”

কঠিন সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হওয়া

নার্সিংয়ে যেমন আনন্দ আছে তেমনই অনেক কঠিন সমস্যাও রয়েছে। এই কাজে কখনও কোন ভুল করা চলবে না! ওষুধ খাওয়ানোর সময়, রোগীর শরীর থেকে রক্ত নেওয়ার বা তার শরীরে কোন কিছু প্রবেশ এর সময়, এমনকি রোগীকে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নেওয়ার সময়ও নার্সকে চোখকান খোলা রাখতে হবে। তার কোন ভুল করা চলবে না, বিশেষ করে সেই সমস্ত দেশে যেখানে সামান্য ভুলের জন্য মামলা ঠুকে দেওয়া হয়। এছাড়াও, কখনও কখনও নার্সরা এক কঠিন সমস্যার মুখোমুখি হন। যেমন, একজন নার্স হয়তো মনে করতে পারেন যে ডাক্তার রোগীকে ভুল ওষুধ দিয়েছেন বা তিনি এমন কোন কিছু করতে বলেছেন, যা রোগীর জন্য ভাল হবে না। সেই সময় একজন নার্স কী করবেন? তিনি কি ডাক্তারের কথায় আপত্তি জানাবেন? এর জন্য সাহস, বিচার-বুদ্ধি ও দক্ষতা দরকার কারণ এটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল, কিছু ডাক্তাররা তাদের অধীনের কোন কর্মচারীর দেওয়া পরামর্শ মেনে নিতে চান না।

এই বিষয়ে কিছু নার্স কী বলেছেন?
আমেরিকার উইসকনসিনের বারবারা রেইনকি ৩৪ বছর ধরে একজন নার্স, তিনি বলেছিলেন: “একজন নার্সকে সাহসী হতে হবে। প্রথমত, সে রোগীকে যে সমস্ত ওষুধ খাওয়ায় বা চিকিৎসা করে তার জন্য রোগীর কোনরকম ক্ষতি হলে সে আইনগতভাবে দায়ী। একজন ডাক্তার যদি তাকে এমন কিছু করতে বলেন যা সে আগে কখনও করেনি বা যদি সেটাকে সে ভুল বলে মনে করে, তাহলে সে সেই কাজ করতে পারবে না, তা বলার মতো সাহস তার থাকতে হবে। ফ্লোরেন্স নাইটিংগেলের আমলের বা মাত্র ৫০ বছর আগের নার্সিং আর আজকের নার্সিংয়ের মধ্যে আকাশপাতাল তফাত রয়েছে। কখন ডাক্তারকে না বলতে হবে এবং কখন রোগী দেখার জন্য ডাক্তারকে আসতে বলতে হবে এমনকি তা যদি মাঝরাতেও হয়, তা এখন নার্সকে বুঝতে হয়।

কাজ করার সময় নার্সদের আরেকটা কঠিন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় আর তা হল তাদের শারীরিক আক্রমণের শিকার হতে হয়। সাউথ আফ্রিকার একটা রিপোর্ট বলে যে, নার্সরাই “কাজের জায়গায় সবচেয়ে বেশি খারাপ ব্যবহার ও শারীরিক আক্রমণের শিকার হন। সত্যি বলতে কী কারারক্ষক বা পুলিশ অফিসারদের চেয়ে কাজের সময় নার্সদের ওপরই আক্রমণ আসার ভয় বেশি আর শতকরা ৭২ জন নার্স নিজেদের নিরাপদ মনে করেন না।” যুক্তরাজ্যেও একই বিষয় বলা হয়েছিল। সেখানে কিছু দিন আগে করা এক সমীক্ষায় ৯৭ শতাংশ নার্স বলেছিলেন যে তারা প্রত্যেকেই এমন একজন নার্সকে চেনেন, যিনি গত বছর শারীরিক আক্রমণের শিকার হয়েছিলেন। কারা আক্রমণ করে? সাধারণত যে রোগীরা মাদকাসক্ত বা মাতাল, মানসিক চাপ বা যন্ত্রণার মধ্যে থাকে, তারাই তা করে থাকে।

শুধু তাই নয়, সবসময় চাপের মধ্যে থাকার ফলে নার্সরা শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়েন। আর তার একটা কারণ হল পর্যাপ্ত কর্মচারী না থাকা। অতিরিক্ত কাজের চাপে যখন একজন সচেতন নার্স রোগীকে ঠিকমতো দেখাশোনা করতে পারেন না, তখন তিনি মনের মধ্যে একটা চাপ অনুভব করেন। এই অবস্থাকে কাটানোর জন্য তিনি বিরতির সময় এবং নির্ধারিত কাজের সময়ের পরে অতিরিক্ত সময় কাজ করেন কিন্তু তা কেবল আরও বেশি চাপই নিয়ে আসে।

সারা পৃথিবীতে এমন অনেক হাসপাতাল রয়েছে, যেখানে পর্যাপ্ত কর্মচারী নেই। মাদ্রিদের মানডু সানিটারিও একটা রিপোর্টে বলে, “আমাদের হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত নার্স নেই। যাদের চিকিৎসার দরকার হয়েছে তারাই নার্সদের মর্ম বুঝেছেন।” এই ঘাটতির কারণ কী ছিল? টাকা বাঁচানো! ওই একই রিপোর্ট আরও বলেছিল যে মাদ্রিদের হাসপাতালগুলোতে ১৩,০০০ নার্সের ঘাটতি ছিল!

নার্সদের ওপর চাপের আরেকটা কারণ হল, তাদের অনেক বেশি সময় কাজ করতে হয় অথচ সেই তুলনায় বেতন খুবই কম। দ্যা স্কটস্‌ম্যান বলেছিল: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা , অনুযায়ী ব্রিটেনে প্রতি পাঁচ জন নার্সের মধ্যে একজনেরও বেশি নার্স এবং নার্সিংয়ের এক চতুর্থাংশ সহকারী কর্মচারীদের তাদের রোজকার জীবনের চাহিদা মেটানোর জন্য আরেকটা চাকরি করতে হয়।” প্রতি চার জনের মধ্যে তিন জন নার্সই মনে করেন যে তাদের কম বেতন দেওয়া হয়। আর এর ফলে অনেকেই নার্সিং ছেড়ে দেওয়ার কথা ভেবেছেন।

নার্সদের চাপ অনুভব করার আরও অনেক কারণ রয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নার্সদের কাছ থেকে যে মন্তব্যগুলো জেনেছেন, তার থেকে বোঝা যায় যে রোগীর মৃত্যুও নার্সদের মন ভেঙে দিতে পারে। মিশরীয় বংশোদ্ভদ মাগ্‌দা সোয়াং নিউ ইয়র্কের ব্রুকলিনে কাজ করেন। তাকে যখন জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে কী তার কাজকে কঠিন করে তোলে, উত্তরে তিনি বলেছিলেন: “গত দশ বছরে আমি মারাত্মক রোগে আক্রান্ত ৩০ জন রোগীকে মারা যেতে দেখেছি, যাদের আমি দেখাশোনা করতাম। এটা একজনকে মানসিক ও শারীরিক দিক দিয়ে দুর্বল করে দেয়।” তাই এতে অবাক হওয়ার কিছুই নেই যে, একটা বই বলে: “মনপ্রাণ দিয়ে কোন রোগীর দেখাশোনা করার পর যদি সেই রোগী মারা যায়, তাহলে তা একজনের শরীর ও মনের ওপর প্রচণ্ড আঘাত আনতে পারে।”

নার্সদের ভবিষ্যৎ

প্রযুক্তিবিদ্যার উন্নতি এবং প্রভাব নার্সিংয়ের ওপর চাপ বাড়ায়। কারণ প্রযুক্তি এবং মানবিকতা অর্থাৎ মানুষ যেভাবে রোগীদের দেখাশোনা করে, এই দুইয়ের মধ্যে সমতা রাখা খুবই মুশকিল। কোন যন্ত্র কখনোই একজন নার্সের মতো যত্ন ও সহানুভূতি দেখাতে পারবে না।

একটি পত্রিকার  উদ্ধৃতি  “নার্সিং চিরস্থায়ী এক পেশা। . . . যতদিন মানুষ থাকবে, ততদিন যত্ন, মমতা ও সহানুভূতির দরকার হবে।” নার্সিং এই প্রয়োজনগুলো মেটায়। তবে মানুষের স্বাস্থ্য সম্বন্ধে আরও সুন্দর এক আশা রয়েছে। 

 আল মামুন
বিএসসি ইন নার্সিং
চট্টগ্রাম নার্সিং কলেজ

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন
কপিরাইট © ২০১৮-২০২৪. নার্সবিডি.কম কর্তৃক সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত

Theme Customized By BreakingNews