রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সরকারী ও বেসরকারী নার্সিং কলেজের ৩য়, ২য়, ১ম বর্ষের চুড়ান্ত পরীক্ষা-২০২৪ ইং আগামী ১৭ই অক্টোবর ২০২৪ ইং বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
আমার প্রাক্তন কর্মস্থল একই সাথে বর্তমান কর্মস্থলের সকল শিক্ষার্থীদের জন্যে রইল আমার মন থেকে দোয়া ও শুভকামনা।
বিশেষত প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্যে রইল আন্তরিক ভালোবাসা এবং শুভাশীষ।
সকল শিক্ষার্থী বিশেষত প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের নার্সিং আন্ডার-গ্র্যাজুয়েশন কোর্সের প্রথম চুড়ান্ত পরীক্ষার জন্যে কিছু অনুপ্রেরণাযুক্ত দিকনির্দেশনা রইল যা নিন্মে বর্ণিত, আশা করি এই দিকনির্দেশনাগুলো পরীক্ষার্থীর জন্যে ইতিবাচক ভুমিকা রাখতে সহযোগিতা করবে৷
তাই আগ্রহীরা চাইলে দিকনির্দেশনা গুলো ধৈর্য সহকারে দেখে আসতে পারেন। একটু বিস্তারিতভাবেই দিয়েছি নতুন পরীক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে তাই বেশ ধৈর্য্যসাপেক্ষ হবে। তবে কেউ উপকৃত হলে নিজেকে ধন্য মনে করব। আগাম ধন্যবাদ রইল।
#দিকনির্দেশনাসমুহ:
পরীক্ষাপুর্ব প্রস্তুতির দিকনির্দেশনাসমুহ :
১। পরীক্ষার রুটিন গভীরভাবে মনযোগ সহিত প্রতিবার পরীক্ষার পুর্বে গুরুত্বের সাথে দেখতে হবে ও নিশ্চিতভাবে পরীক্ষার জন্যে প্রস্তুত হতে হবে৷ কোনভাবেই দিন তারিখ ও বিষয় নিয়ে ভুল করা যাবে না।
২। পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্যে ধাপে ধাপে পরিকল্পনার সহিত প্রস্তুতি গ্রহন করতে হবে৷ সালের প্রশ্নপত্রের সব প্রশ্নগুলোকে সেই সাথে প্রশ্নের সাথে সংশ্লিষ্ট টপিক গুলোর কনসেপ্ট গুলো স্পষ্টভাবে সুক্ষ্ম থেকে সুক্ষ্ম ও খুটিনাটি বিষয়গুলো বিস্তারিত জানতে হবে এবং চর্চা করতে হবে লিখিতভাবে।
** সালের প্রশ্নের মধ্যে যেগুলো বারবার করা হয়েছে (সাধারণত সাবজেক্টের বেসিক ও সাধারণ টপিক গুলোই একাধিকবার বিভিন্ন সালে পুনরাবৃত্তি করা হয়ে থাকে) সেগুলোকে অগ্রাধিকার দিতে এভাবে ক্রমানয়ে সব প্রশ্নসমুহকে গুরুত্বের সাথে বুঝে বুঝে লিখিতভাবে পরিপুর্ণ ও সঠিক তথ্যবহুল পয়েন্ট উপস্থাপন করে সাবলীলভাবে সেই সাথে সীমিত শব্দের মধ্যে সংক্ষিপ্ত অথচ পরিপুর্নতার সাথে চর্চা করতে থাকতে হবে।
এতে করে পরীক্ষার হলে সময়ের মধ্যে উত্তর লেখা সম্পন্ন করার সক্ষমতা তৈরী হবে।
** সালের কোশ্চেন গুলো যথাযথভাবে অনুশীলনের পর যদি পর্যাপ্ত সময় ও পরিশ্রম করার মানসিকতা থাকে তবে সিলেবাসের অবশিষ্ট গুরুত্বপুর্ন টপিক গুলোকে ধারাবাহিকভাবে চর্চা করতে হবে সম্ভব হলে একবারের জন্যে হলেও একবার চোখ বুলিয়ে যাওয়াটা অবশ্যয় কর্তব্য ।
কিন্তু সময় স্বল্প থাকলে এই বিশাল ঢেকি গেলার কাজটা পরিহার করাই শ্রেয়।
৩। পরীক্ষার পুর্বে ও চলাকালীন সময়ে মানসিক ও শারীরিকভাবে সুস্থতা থাকার কোন বিকল্প নেই।
বিশেষত মানসিকভাবে সুস্থ ও শক্তিশালী থাকাটা অত্যন্ত জরুরী৷
তাই এই সময় শিক্ষকদের সাথে নিয়মিত দেখা সাক্ষাত ও পরামর্শ গ্রহন করা, কোন সহযোগিতার প্রয়োজন হলে সংকোচ না করে বিনম্রতার সাথে শিক্ষকের সাথে আলোচনা করা, পরিবারের সাথে যোগাযোগ করা দোয়া নেওয়া, ভাল স্টুডেন্ট ও বন্ধুদের সাথে নিয়মিত গ্রুপ স্টাডি করা ও নিজের মনের নেতিবাচক উদ্দীপনা যেমন ভয় পাওয়া, হতাশ হওয়া শেয়ার করে মনকে শক্তিশালী করার জন্যে ভাল ভাল চিন্তা করা।
সর্বোপরি, সৃষ্টিকর্তার করুনার ওপর আস্থা রেখে প্রতিনিয়ত দোয়া করতে থাকা৷
** আর এই সময়ে, নিয়ম মত সঠিক সময়ে খাওয়া দাওয়া করা ও পুষ্টিকর খাবারের সাথে সাথে প্রোটিনযুক্ত খাবার গ্রহনে যত্নশীল হওয়া।
অতিরিক্ত রাত জেগে মস্তিষ্ককে নির্যাতন করে অধিক পড়াশুনা না করাটাও জরুরী। পর্যাপ্ত ঘুমানোর ক্ষেত্রেও যত্নশীল হতে হবে।
৪। সঙ্গ দোষে লোহা ভাসে, তাই মনের সহজপ্রবৃত্তি অনুকরণপ্রিয়তাকে কৌশলে কাজে লাগানোর জন্যে, বিশ্বস্ত সেইসাথে ভাল স্টুডেন্ট এর সাথে গ্রুপ স্টাডি করা। এতে করে পরোক্ষ শিখন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শেখাটা দ্রুত হবে অন্যদিকে আমার অজানা টপিক অথচ বন্ধু জানে এমন গুরুত্বপুর্ন বিষয়গুলোও বুঝার জন্যে সঠিক গাইডলাইন পাওয়া সহজ হবে।
পড়ার প্রতি মানসিক স্পৃহাহীনতা দূর হয়ে যাবে বন্ধুর পড়াশুনা দেখে, মানসিকভাবে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অন্যের পড়াশুনা দেখে নিজের ও পড়াশুনার করার উদ্দীপণা তৈরী হবে। তাই গ্রুপ স্টাডি পরীক্ষার পুর্বে সর্বোত্তম কৌশল।
** গ্রুপ স্টাডির ক্ষেত্রে ৩জন হওয়াটা সবচেয়ে উত্তম ও কার্যকর তবে ৩জনের অধিক হওয়াটা সুফল কম সময়ের অপচয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায় তাই ৩জনের বেশি কখনোই স্টাডি পার্টনার রাখা যাবে না৷
আর যদি ৩ জন না পাওয়া যায় তবে ২ জন করে সম্মিলিত পরিকল্পনার সাথে টপিক ভাগ করে করে দুইজন সলভ করবে এবং সলভ শেষে একে অন্যকে বুঝিয়ে লেকচার দিবে অন্যজন তা ভালভাবে বুঝে নিবে আর যদি পড়া টপিক হয় তবে রিভিশন করে ঝালিয়ে নিবে। এভাবে অন্যজন ও একইভাবে তার আত্বস্থ করা পড়া লেকচার দিয়ে বুঝিয়ে পড়াবে অন্যজন তা গভীরভাবে মনযোগ দিয়ে শিখে নিবে তারপর উভয়ই সেই আলোচিত টপিক গুলো নিজে নিজে মুখস্থ করে একে অন্যের কাছে ডেলিভার করবে ও একে অন্য দুইজনের পড়া যাচাই করবে।
** গ্রুপ স্টাডিতে যদি কোন জটিলতা কিংবা সীমাবদ্ধতা পরিলক্ষিত হয় যেমন হোস্টেলে না থাকা কিংবা বাসা দূরে ইত্যাদি। তবে সেক্ষেত্রে দিনের মধ্যে যেকোন সুবিধামত সময়ে অন্তত ২ ঘন্টার জন্যে হলেও গ্রুপ স্টাডি করা।
কিন্তু কোনভাবেই গ্রুপ স্টাডিকে উপেক্ষা করে একা প্রস্তুতি গ্রহন করে আশানুরুপ ভাল ফলাফল করাটা নি:সন্দেহে বোকামী হবে৷
অন্তত নার্সিং তথা মেডিকেল সায়েন্স এর কোন সেক্টরের পড়াশুনাতেই এইটা সম্ভবপর নয় , আমি ব্যক্তিভাবে মনে করি এইটা। তাই গ্রুপ স্টাডি করা অত্যন্ত কার্যকরী।
৫। পরীক্ষার আগে সংশ্লিষ্ট সাবজেক্টের ব্যবহারিক পরীক্ষা থাকলে সেগুলো সম্পর্কে স্পষ্টভাবে বিস্তারিত জেনে নেওয়া প্রয়োজনে শিক্ষকের সহযোগিতা গ্রহন করা এবং অবশ্যয় শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে আরেকবার ব্যবহারিক প্রোসিডিওরগুলো অনুশীলন করে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিশ্চিত করতে হবে।
#পরীক্ষার হলে করনীয়:
১। পরীক্ষার হলে প্রথম পরীক্ষার ক্ষেত্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার ৪০ মিনিট আগে উপস্থিত হতে হবে অন্যদিনের ক্ষেত্রে নুন্যতম ১৫ মিনিট আগে উপস্থিত হওয়াটা অত্যাবশক সেইসাথে যথাযথ আসনবিন্যাস অনুসরণ করে নিজ আসনে বসতে হবে।
** কোনক্রমেই পরীক্ষার হলে দেরী করে আসা যাবে না কারণ খাতায় নাম লিখা ও বৃত্তভরাটের জন্যে বেশ সময় দরকার হয় অন্যদিকে এমসিকিউ এর সময় ও সীমিত থাকে তাই এখানে দেরী করলে নিজের নির্ধারিত পরীক্ষার সময় থেকে সেইটা বাদ পড়ে যাবে তাই সাবধান থাকতে হবে৷
২। পরীক্ষার হলে আসার আগে অবশ্যয় সকালের খাবার গ্রহন করা।।
পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার নুন্যতম ১ ঘন্টা আগে সকালের খাবার খেতে হবে, এতে খাবার হজম জনিত অস্থিরতা তৈরি হবে না সেই সাথে অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার পরিহার করা উত্তম৷
** ভালভাবে ফ্রেশ হওয়া বিশেষত প্রাকৃতিক নিত্যকর্ম গুলো সম্পন্ন করে নিজেকে শারীরিকভাবে প্রস্তুত রাখতে হবে
** নির্ধারিত ড্রেস কোড অনুসারে পরিষ্কার সুন্দর আইরণ করা ড্রেস পড়তে হবে, সেই সাথে নেম প্লেট, কলেজ আইডি কার্ড ও কলেজ লোগোব্যাজ সঠিকভাবে ধারণ করতে হবে, বেল্ট পড়তে হবে একই সাথে কালি করা পলিশ সু পড়তে হবে।
এডমিট কার্ড, লিখার জন্যে পেন, পেন্সিল, স্কেল নিয়ে ফাইল প্রস্তুত করতে হবে এবং প্রতিদিন পরীক্ষার হলে আসার আগে সেগুলো ঠিক আছে কিনা বিশেষত পেনের কালি আছে কি না নিশ্চিত হওয়া।
* পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষার হলে যাওয়ার সময় কোন প্রকার অলংকার (আঙটি, চুড়ি, ব্রেসলেট, রঙিন ক্লিপ, ব্যান্ড) পড়া যাবে না তবে হাতে ঘড়ি পড়াটা অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ন।
৩। পরীক্ষার হলে প্রবেশের পর সময় নিয়ে ঠান্ডা মাথায় যাবতীয় তথ্যাদি খাতায় সর্তকতার সাথে লিখে পুরণ করতে হবে একইভাবে সতর্কতার সাথে বৃত্ত ভরাট করতে হবে৷ খাতায় মার্জিন টেনে আগেই প্রস্তুত করে রাখাটা উত্তম৷।।
বিশেষত খাতা পরিদর্শক কর্তৃক স্বাক্ষর করানোর বিষয়ে এবং পরীক্ষার্থীর উপস্থিতি নথি অর্থাৎ এটেন্ডেন্স খাতায় স্বাক্ষর করা ও নিশ্চিতের বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।
৪। প্রশ্নপত্র পাওয়ার পর, প্রথমে প্রশ্নটা ভালভাবে পড়তে হবে এবং প্রশ্নগুলোকে বুঝতে হবে।
প্রশ্নের নির্ধারিত মানবন্টন ও সময়ের মধ্যে সকল প্রশ্নোত্তর শেষ করার জন্যে তৎক্ষনাক একটা ছোট্ট পরিকল্পনা করে নিতে হবে৷।
** এক্ষেত্রে যেই প্রশ্ন সহজ, মুখস্থ এবং পরিচিত সেই প্রশ্নগুলো আগে লিখার জন্যে প্রাধান্য দিতে হবে এভাবে ধীরে ধীরে ক্রমান্বয়ে সকল প্রশ্নের উত্তর করার জন্যে প্রস্তুতি নিতে হবে৷
** ছক, পয়েন্ট, চিত্র সংবলিত প্রশ্নগুলো যদি কমন থাকে তাহলে সেগুলো প্রথমে নির্ভুলভাবে সুন্দর ও সাবলীলভাবে লিখতে হবে। এতে করে পরীক্ষক খাতা দেখার সময় বিরক্ত কম হবে বরং ইতিবাচক সাড়া দিবে।
৫। প্রতিটা প্রশ্নের উত্তর সময়ের মধ্যে লিখে আসার সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। কোনভাবেই কোন প্রশ্নের উত্তর ছেড়ে আসা যাবে না।
** এইজন্যে মানবন্টন অনুসারে প্রশ্নের যথাযথ উত্তর লিখতে হবে সাথে সময়ের সঠিক বন্টন নিশ্চিত করতে হবে৷ একটা প্রশ্নের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সময় দিয়ে অন্য প্রশ্নগুলো লেখার জন্যে সময় সংকট তৈরী করাটা বোকামী
কারণ একটা প্রশ্নের ক্ষেত্রে নির্ধারিত মানবন্টেনের অতিরিক্ত নম্বর প্রদানের কোন সুযোগ নেই অথচ কম কম করে লিখলেও প্রশ্নের উত্তরের সংখ্যা যত বেশি হবে নম্বর পাওয়ার সুযোগ ও তত বেশি হবে আর পরীক্ষকের ও নম্বর দেওয়ার সুযোগ থাকবে।
তাই প্রশ্নের মান অনুসারে সময় বন্টনের পরিকল্পনা করতে হবে৷
** প্রশ্ন কমন না থাকলে নিজের দ্বারা সম্ভব সকল প্রশ্নের উত্তর নিশ্চিতের পর অবশিষ্ট সময়ে অন্যের সহযোগিতা গ্রহন করতে হবে।
কোনক্রমেই আনকমন প্রশ্ন আগে লিখতে যাওয়া যাবে না আর অন্যের সাহায্যের আশায় সময় অযথা নষ্ঠ করা যাবে না।
**অন্যের সাহায্যের মাধ্যমেও যদি উত্তর করার সুযোগ না থাকে তবে নিজের কল্পনাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে টপিক রিলেটেড উপযুক্ত তথ্যাদি যুক্ত করে হলেও প্রশ্নের উত্তর লিখে আসা। কোন অবস্থাতেই খাতা ফাকা কিংবা প্রশ্নের উত্তর বাকী রাখা যাবে না। এক্ষেত্রে বিশেষ সচেতন থাকতে হবে।
৬। লিখিত উত্তরগুলো রিভিশন করার জন্যে সময় বরাদ্দ রাখা, পরীক্ষার সময় শেষ হওয়ার আগেই খাতাপত্র ভালভাবে গুছিয়ে সেলাই করে রিভিশন করে পরীক্ষার সময় শেষ হলে খাতা জমা দিতে হবে।
উপরোক্ত বর্নিত দিকনির্দেশনা অনুসরণ করলে ইনশাআল্লাহ প্রতিটা পরীক্ষাতে সফল ই না বরং সর্বোচ্চ নম্বর নিশ্চিত হবে এই দৃঢ় প্রত্যাশা ব্যক্ত করে সকলকে জানাই শুভকামনা৷
শুভেচ্ছান্তে,
শেখ ঈমাম মাহাদী
নার্সিং ইন্সট্রাক্টর